কংক্রিটের ছাদ আলাদা হয়ে ঝুলে রয়েছে। বিপজ্জনক স্কুলে তিন বছর ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশুনা বন্ধ রয়েছে পটাশপুরে
পটাশপুর- উদ্বোধনের কয়েক মাস পরেই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র ভেঙে চৌচির অবস্থা। কংক্রিটের ছাদ দেওয়াল থেকে সরে গিয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়তে পারে গোটা স্কুলটি। বিপজ্জনক বুঝে প্রশাসনের নির্দেশে পড়াশুনা বন্ধ থাকায় গত তিনবছর স্কুলে আসেনা ছাত্র ছাত্রীরা। শুধু শিক্ষিকারা ভাঙা স্কুলে নিয়মিত হাজিরা দেন। রান্না করে বাইরে খাবার বিতরণ করে অভিভাবকদের। প্রশাসনের উদাসীনতায় ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ।
অমরপুর-১১ নম্বর অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গত ২০১৬-১৭ আর্থিক বর্ষে পাকা বাড়ি তৈরী হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের একশো দিনের কাজ ও আইসিডিএস প্রকল্পের সাত লক্ষ টাকা বরাদ্দে এই অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেটি গড়ে ওঠে। বর্তমানে স্কুলে ছাত্র ছাত্রী ও গর্ভবতী মহিলা মিলে পঁয়ষট্টি জন রয়েছে। শূন্য থেকে ছ'বছর বয়সী শিশুদের ও গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টিকর খাবারের যোগানের লক্ষে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র গুলি গড়ে ওঠে। স্কুল উদ্বোধনের এক বছরের মধ্যেই কেলেঘাইনদী বাঁধ ভেঙে বন্যার ফলে এই স্কুলেও জল উঠে পড়ে। শুরুতে স্কুলে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে পড়াশুনা হতো। বন্যার কয়েক মাসের মধ্যেই স্কুলের দেওয়ালে ফাটল দেখা যায়। পরবর্তীতে গোটা বিল্ডিং ভেঙে চৌচির অবস্থা দেখা দিয়েছে। বিল্ডিং তৈরীতে মাটির নিচ থেকে কংক্রিটের কোন কলাম না থাকায় এই সমস্যা আরো জটিল আকার নিয়ে। শুধু ইটের দেওয়াল ও ইটের কলামের উপর ছাদ থাকায় এখন গোটা ছাদটা আলাগা হয়ে রয়েছে। দেওয়াল থেকে স্কুলের ছাদ একদিকে সরে গিয়েছে। করোনা পরিস্থিতি থেকে এই সমস্যা আরো ভয়াবহ হয়ে রয়েছে। প্রাণের ঝুঁকি বুঝেই ব্লক প্রশাসনের ২০২০ সাল গত তিন বছর আগে থেকে স্কুলের ভিতরে ছাত্র ছাত্রীদের ঢোকা বন্ধের নির্দেশিকা জারি করে। সেই মতো গত তিন বছর স্কুলে শিশুদের পঠন পাঠন বন্ধ হয়ে রয়েছে। স্কুলের ভিতরে এখন অনায়াসে দিনে ও রাতে খেলে বেড়ায় সূর্য ও চাঁদের আলো। দেওয়ালের মাঝ খান দিয়ে উঁকি মারে গাছপালা। শিশুদের পড়াশুনা বন্ধ থাকলেও নিয়মিত স্কুলে আসেন কর্মী ও সহায়িকা। সেই ভাঙা ছাদের নিচে স্কুলের অফিসের কাজ করতে হয়। ডিম ভাত ও খিচুড়ি রান্না করতে হয়। রান্না করা খাবার স্কুলের বাইরে দাঁড়িয়ে নিয়ে যায় শিশু ও তাদের অভিভাবকেরা। পটাশপুরের বিধায়ক উত্তম বারিক মাঝে একবার স্কুল মেরামতির প্রতিশ্রুতি দিলেও এখনো তার বাস্তবায়িত হয়নি। স্কুলের তরফে ব্লক থেকে প্রকল্প আধিকারিককে একাধিক বার আবেদন জানালেও কোন সদুত্তর এখনো আসেনি। স্কুলের পড়াশুনা বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ এলাকায় মানুষ। ভাঙা স্কুলে খাবার আনতে যাওয়া ও ঝুঁকি নিতে চায়না কেউই। হয় স্কুলে ভেঙে দেওয়া হোক। নতুবা স্কুল অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হোক দাবী অভিভাবকদের।
এক অভিভাবক বলেন 'জরাজীর্ণ অবস্থায় কয়েকবছর ধরে রয়েছে স্কুলটি। যেকোন মুহুর্তে ভেঙে পড়তে পারে। স্কুলে পড়াশুনা বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনের এই বিষয়ে কোন হেলদোল নেই। অবিলম্বে স্কুলের সুব্যবস্থা করতে হবে'।
অঙ্গনওয়াড়ি স্কুলের কর্মী তথা শিক্ষিকা প্রভাতী দাস বলেন 'গোটা স্কুলের বিল্ডি ভেঙে বিপজ্জনক হয়ে রয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশে ছাত্র ছাত্রীদের স্কুলে আসা বন্ধ রাখা হয়েছে। শুধু রান্না করা খাবার স্কুলের বাইরে থেকে ছাত্র ছাত্রীদের বিতরণ করা হয়। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ জানিয়েও কোন কাজ হয়নি। নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে স্কুল করতে হয়'।
পটাশপুর-১ বিডিও বিধানচন্দ্র বিশ্বাস বলেন ' প্রকল্প আধিকারিক কিংবা স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফে এই ধরনের কোন তথ্য আমাকে পাঠানো হয়নি। দ্রুত খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।
Comments
Post a Comment