শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের হাতে গড়া সরস্বতী পুজো ঘিরে উচ্ছ্বাস স্কুলে
এগরা- টিফিনে তাড়াতাড়ি হাফ পেট খেয়ে দিয়ে পড়ুয়ারা প্রতিমা তৈরীতে হাত লাগিয়েছে। ছুটির পরে কেউ বাড়ি না গিয়ে শিক্ষকের সঙ্গে খড়ের উপর কাদার প্রলেপ দিতে দেখা গেছে। গত একমাসে স্কুলের বারান্দায় শিক্ষক ও ছাত্র ছাত্রীদের হাতের কোমল স্পর্শে তৈরী বাগদেবীর আরাধনা হলো স্কুলেই। পুজো শুরুর আগেই স্কুলে জুড়ে ছিল পুজোর আমেজ।
ছোট থেকেই তিনি প্রতিমা তৈরী করতেন। স্কুলে শিক্ষকতায় যোগদান করলেও প্রতিমা তৈরীর সেই নেশা তাকে তাড়িয়ে বেড়াতো। এগরা বাথুয়াড়ি আদর্শ বিদ্যাপীঠে কম্পিউটার শিক্ষক হাওয়ার কারনে সারাক্ষণ মাউস নিয়ে তিনি ছাত্র ছাত্রীদের পড়াতেন। সেই হাতে খড় ও কাদা নিয়ে প্রতিমা তৈরী করবেন সেই কথা জানার পরেই স্কুলের অনান্য শিক্ষকেরা প্রথমে ভরসা করে উঠতে পারছিলেননা। পরবর্তীতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌমেন কুমার জানার উৎসাহে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে স্কুলে প্রতিমা তৈরীর কাজে নেমে পড়েন নবাগত কম্পিউটার শিক্ষক। স্কুলে সরস্বতী প্রতিমা তৈরীর কথা শুনে ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষকের সঙ্গে হাত লাগাতে ইচ্ছা প্রকাশ করে। প্রতিমা তৈরীতে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের হাতের কাজ শেখার অভিনব ভাবনা তৈরী হয়। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে প্রতিমার কাঠামো তৈরীর প্রয়োজনীয় বাঁশ ও খড় সংগ্রহ শুরু হয়। ক্লাস চালু রেখে প্রতিমা তৈরীর কাজ একপ্রকার চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠেছিল। সেই কথা মাথায় রেখে টিফিনের সময় ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে প্রতিমা কাঠামো তৈরী থেকে মাটি তৈরীর কাজ শুরু হয়। কখনো স্কুল ছুটির পরে উৎসাহি ছাত্র ছাত্রীদের সহযোগিতায় প্রতিমায় খড়ের উপর কাদা প্রলেপ দেওয়া। বাগদেবীর বাহন হাঁস ও বীনা তৈরীর কাজ শেষ করা সবটাই ঘড়ি দেখে করতে হয়েছে। শেষ এক সপ্তাহ সেই কাজের চাপ অনেকটাই বেড়েছিল। প্রতিমা সজ্জায় রং ও শাড়ির পাশাপাশি ডাকের সাজে গহনা প্রস্তুতির কাজটা বেশ কঠিন ছিল। স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে নবম শ্রেণীর জনা কুড়ি ছাত্র ছাত্রীরা শিক্ষকের সঙ্গে সমানে কাজে হাত লাগিয়েছে। স্কুলের অনান্য শিক্ষকেরা সরঞ্জাম কেনায় সহকর্মীকে সহযোগিতা করেছেন। নিজের হাতে ডাকের সাজের নকশা তৈরী করা থেকে শোলা কাটতে হয়েছে। শিক্ষকের নির্দেশ মতো ছাত্র ছাত্রীরা আঠা দিয়ে শোলা বসিয়ে গহনা তৈরী করেছে। শনিবার বিকেলে হয় বাগদেবীর চক্ষুদান ও শেষ সাজসজ্জা। একচালা কাঠামোতে শ্বেতশুভ্র বাগদেবীর উচ্চতা প্রায় সাত ফুটের মতো। নিজেদের হাতে তৈরী সরস্বতী প্রতিমা দেখে আবেগ আপ্লুত ছাত্র ছাত্রী থেকে শিক্ষকেরা। স্কুলে পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত চৌদ্দশোর বেশি ছাত্র ছাত্রী পড়াশুনা করে। রবিবার সকাল থেকে স্কুলে বাগদেবীর পূজার্চনা শুরু হয়েছে। পুষ্পাঞ্জলি দিয়েছেন স্কুলে শিক্ষক থেকে ছাত্র ছাত্রীরা। কেউ মন্ডপের সামনে ফুলের রঙ্গোলি তৈরীতে হাত লাগিয়েছেন। বাগদেবীর আরাধনায় গত একমাস ধরে উৎসবে মাতোয়ারা ছিল বাথুয়াড়ি আদর্শ বিদ্যাপীঠে। স্কুলের এই অভিনব প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন অভিভাবকেরা।
প্রতিমা শিল্পী তথা শিক্ষক উত্তম পাত্র বলেন ' নেশা থেকে প্রতিমা তৈরী ইচ্ছা শক্তিকে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছি। স্কুলের শিক্ষকদের উৎসাহ থেকে এই চেষ্টা করেছি। ছাত্র ছাত্রীদের আনন্দে সকলেই আমরা খুশি'।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সৌমেন কুমার জানা বলেন 'সহকর্মী এক শিক্ষক মহাশয়ের মনের জোরে ছাত্র ছাত্রী থেকে আমরা সকলেই আজ আনন্দিত। এভাবে সহকর্মী ও ছাত্র ছাত্রীদের হাতে তৈরী সরস্বতী পুজো করতে পেরে অন্য অনুভূতি তৈরী হয়েছে। ছাত্র ছাত্রীরা পড়াশুনার ফাঁকে নিজেদের ভাবনা ফুটিয়ে তুলতে পেরে খুশি হয়েছে'।
Comments
Post a Comment