পঞ্চমবার ও কন্যা সন্তান হওয়ার রাগে সদ্যজাতকে লোককে দিয়ে দিলেন জন্মদাতা বামা ও মা

পুত্র সন্তানের আশায় পঞ্চমবারেও কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। আর্থিক অনটনের সংসারে পঞ্চম শিশু কন্যার খাবার জোগাড় করতে পেরে উঠছিলেন না। অভাবের তাড়নায় সদ্যজাত শিশু কন্যাকে এক নিঃসন্তান দম্পতিকে তুলে দিলেন শিশুর বাবা মা। কন্যা সন্তান হওয়ায় নিজের শিশুকে বিক্রি করেছেন দাবী প্রতিবেশীদের। বেআইনিভাবে জেনে ও চুপ স্বাস্থ্য দফতর।  

পটাশপুরের দক্ষিন ইটাবেড়িয়া গ্রামের দম্পতি খোকন মাইতি ও কল্পনা মাইতি। দম্পতির আগে চারজন মেয়ে রয়েছে। দারিদ্র্যতাকে নিত্যসঙ্গী করে চার মেয়েকে বড়ো করেছেন। দিনমজুর খোকন বংশ রক্ষায় পুত্র সন্তান লাভের আশায় পঞ্চমবার চেষ্টা করেন। মাস সাতেক আগে নিজের গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে পাশের ইটাবেড়িয়াতে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন। ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পথে ইটাবেড়িয়া বাজারে খনিক দুজনে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। সেই সময় এগরার মোটাঘাটের নিঃসন্তান দম্পতি গৌতম পাত্র ও শকুন্তলা পাত্রের সঙ্গে তাদের আলাপ হয়। নিঃসন্তান পাত্র দম্পতি ইটাবেড়িয়াতে এক কবিরাজের কাছে এসেছিলেন তাদের সন্তান লাভের জন্য চিকিৎসার জন্য। পরবর্তীতে ওই কবিরাজ তাদের জানান ভবিষ্যতে তাদের সন্তান লাভের সম্ভাবনা ক্ষীণ। পাত্র দম্পতি ও মাইতি দম্পতির আলাপচারিতার মধ্যে নিজেদের দুঃখ কষ্টের ভাব বিনিময় হয়। সেই থেকে মাইতি দম্পতির সঙ্গে আত্মীয়তা তৈরী করেন এগরার পাত্র দম্পতি। পঞ্চম সন্তান যদি কন্যা হয় মাইতি দম্পতি তাদের সন্তানকে পাত্র দম্পতিকে লালন পালনের জন্য তুলে দেবেন বলে অঙ্গীকার করেন। সেই থেকে দুই পরিবারের মধ্যে যোগাযোগ ও ঘনিষ্ঠতা তৈরী হয়। দুই পরিবার একে অন্যের বাড়িতে যাতায়াত করে। গত ২ ফেব্রুয়ারি এগরা মহকুমা হাসপাতালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি হয়েছিল কল্পনা মাইতি। সেদিন হাসপাতালে কন্যা শিশুর জন্ম দেন। হাসপাতাল থেকে ছুটি পেয়ে সদ্যজাত শিশু কন্যাকে নিয়ে নিজের গ্রামে ফিরে আসেন কল্পনা। মোটাঘাটের নিঃসন্তান পাত্র দম্পতি ও মাইতি দম্পতি পূর্বের শর্তমেন তাদের শিশুকন্যাকে দেওয়া জন্য উদ্যোগী হয়। অভাবের সংসারে পঞ্চম শিশুকন্যাকে লালন পালন করে মানুষ করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। সেই মতো রেজিস্টির স্ট্যাম্প কাগজে লিখে নিঃস্বর্ত ভাবে নিজের সদ্যজাত শিশুকন্যাকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি পাত্র দম্পতির হাতে তুলে দেন। অঙ্গীকার পত্রে ভবিষ্যতে তারা এই শিশুকন্যাকে নিজের বলে দাবী না করার শর্ত দেন। যদিও প্রতিবেশীদের দাবী কন্যা সন্তান হওয়ায় টাকা বিনিময়ে বিক্রি করা হয়েছে। প্রত্যন্ত গ্রামের মধ্যে শিশুকন্যাকে বেআইনিভাবে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মীরা ঘটনায় জানতে পেরে তাদের পরিবারের কাছে এই ঘটনার লিখিত স্বীকারোক্তি নিয়েছেন। 
 শিশু হস্তান্তরের ঘটনা জানা পরেও এতদিন চুপ জেলা স্বাস্থ্য দফতর। বিষয়টিও অজানা ব্লক প্রশাসনের। জেলা শিশু সুরক্ষা দফতর জানার পরে সদ্যজাত শিশুকে উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। 

সদ্যজাত শিশুকন্যার বাবা খোকন মাইতি বলেন ' ছেলের আশায় পঞ্চমবার কন্য হয়েছে। অভাবের সংসারে মেয়েকে নিজের কাছে রেখে মানুষ করার সামর্থ্য নেই। নিজের শিশু ভালো থাকে এই আশায় নিঃশ্বর্ত ভাবে এগরার পরিচিত পাত্র দম্পতিতে মেয়েকে দান করেছি। কোন টাকা পয়সা লেনদেন হয়নি'। 

শিশু নিয়ে যাওয়া এগরার ব্যক্তি গৌতম পাত্র বলেন 'ডাক্তার দেখাতে গিয়ে উনাদের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। সেই কথা মতো তাদের পঞ্চম বার যদি কন্যা সন্তান হয় আমাদের দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেই মতো স্ট্যাম্প পেপারে লিখে তারা নিঃশ্বর্ত ভাবে শিশুকন্যাকে আমাদের দান করেছেন। আইনি কিভাবে শিশু দত্তক নিতে হয় আমাদের জানা নেই'। 

জেলা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির চেয়ারম্যান জীবনানন্দ দাশ বলেন ' বেআইনিভাবে শিশুকে হস্তান্তর করা যায় না। অবিলম্বে আমরা পুলিশ জেলা প্রশাসনকে সদ্যজাত শিশু সন্তানকে উদ্ধারে নির্দেশ দেবো। শিশু সুরক্ষা আইনে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।                          

Comments

Popular posts from this blog

আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়া নিয়ে বকুনিতে অভিমানে আত্মহত্যা কিশোরের।

এগরার যুবকের সঙ্গে সাতপাঁকে বাঁধা পড়লো বাংলাদেশী কন্যা।

বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা চলছিল। বন্ধুদের সঙ্গে মদ খেয়ে বাইক দুর্ঘটনায় সেই যুবকের মৃত্যু হল।