আবাস যোজনায় বাড়ি না পেয়ে আত্মহত্যা যুবকের?

পটাশপুর- আবাস সমীক্ষায় তালিকায় উপরের দিকে নাম থাকা সত্বেও বাড়ি আসেনি। তালিকায় নীচের দিকে থাকলেও দুই দাদা আবাসের বাড়ি পেয়েছে।  আবাস বাড়ি না পাওয়ায় আক্ষেপ করতেন প্রতিবেশীদের সামনে। অবসাদে ঘুম থেকে মাঝ রাতে পালিয়ে জঙ্গলের গাছে ফাঁস লাগিয়ে যুবক আত্মহত্যা করেছে বলে দাবী পরিজনের। পঞ্চায়েত প্রশাসনের দাবী ওয়েটিং লিস্টে দ্বিতীয় তালিকায় তার নাম রয়েছে। আবাস বাড়ি না পাওয়ায় আত্মহত্যা করেছে কিনা তাদের জানা নেই।

পটাশপুরের তাপিন্দা গ্রামের বছর আটত্রিশ যুবক কমল কুমার সাঁতরা। দরিদ্র পরিবারে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর অবস্থায় দুই ছোট মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে চারজনের কোন মতে সংসার চলতো। সম্বল বলতে ভিটে টুকু। সংসার চালাতে বিভিন্ন হাটে বাজারে ঘুরে ফুটপাতে লেবু ও আদা, রসুন বিক্রি করতেন। শাসক দলের সমর্থক ছিলেন। একচালা অ্যসবেসটসের ছাউনি ও বাঁশের কঞ্চিতে কাদার প্রলেপ দেওয়ার ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করতেন। আবাস সমীক্ষা তালিকায় উপরের দিকে কমলের নাম ছিল। সেই তালিকায় নীচের দিকে নাম ছিল তার বড় ও মেজো দাদার। আবাস যোজনা চূড়ান্ত তালিকায় কমলের নাম আসেনি। দ্বিতীয় তালিকায় ওয়েটিং লিস্টে তার নাম রয়েছে। তালিকায় নীচের দিকে নাম থাকলেও আবাস বাড়ি পেয়েছে তার দুই দাদা মৃত্যুঞ্জয় ও অমল। দুই দাদা আবাস বাড়ি তৈরীর জন্য ইট, পাথর ও বালি ছোট ভাই কমলের বাড়ির সামনে মজুত করছে। এই দেখে কয়েকদিন ধরে আবাস বাড়ি না পাওয়ায় প্রতিবেশী ও পরিচিতদের কাছে অভিযোগ করতেন। তার বাড়ির দুপাশে দাদারা পাকা বাড়ি করছে। নিজে বাড়ি করতে পারছেনা এই নিয়ে অভিমান করতে। বেশ কিছুদিন ধরে কমল মনমরা হয়ে ছিলেন। বাজারে লেবু ও আদা রসুন বিক্রি করতে গেলেও আগের সেই স্বতস্ফূর্ততা তার মধ্যে দেখা যায়নি। ব্যবসার প্রতি মনোযোগ ছিলনা বলে দাবী প্রতিবেশীদের। ব্যবসার প্রতি মনোযোগ না দেওয়ায় কয়েকদিন বিক্রি ভালো হচ্ছিলনা। বাড়িতে খেতে বসেও স্ত্রীকে আবাস যোজনা বাড়ি না পাওয়ায় কথা বলতেন।রবিবার রাতে বাড়িতে খাওয়া দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়ে ছিলেন। মাঝ রাতে বিছানা থেকে পালিয়ে বাড়ির অদূরে জঙ্গলে গাছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। রাতে স্ত্রী সঙ্গীতা ঘুমিয়ে থাকলেও স্বামী বিছানা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি টের পায়নি। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন স্বামী বিছানায় নেই। বাড়ি আশপাশে হাঁকডাক করেও স্বামীর কোন হদিশ পায়নি। স্ত্রী সঙ্গীতা সাঁতরা বলেন 'আবাস বাড়ি না আসায় এই নিয়ে আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করতো। দাদারা পাকা বাড়ি হচ্ছে আমার হলোনা। সেই অবসাদ থেকে আত্মহত্যা করেছে'।  মাঠে যাওয়ার সময় এক কৃষক ওই যুবককে গাছের মধ্যে ফাঁস লাগিয়ে ঝুলতে দেখেন। পুলিশ দেহ উদ্ধার করে অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা করে তদন্ত শুরু করেছে। প্রতিবেশীদের দাবী আবাস যোজনার বাড়ি না আসায় অবসাদ থেকে ওই যুবক আত্মহত্যা করেছে। পঞ্চায়েত প্রশাসনের দাবী যুবকের নাম প্রথম তালিকায় নেই। দ্বিতীয় তালিকায় ওয়েটিং লিস্টে রয়েছে। 

 গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ইরানি মাইতি বলেন ' খুব সহজ সরল ভাবে থাকতেন। আবাস তালিকায় তার নাম বাতিল হয়নি। প্রথম তালিকা নাম না থাকলেও ওয়েটিং লিস্টে উনার নাম রয়েছে। কি কারনে তিনি মারা গেলেন বলতে পারবো না'। 

ইঞ্জিনরিক্সা চালক এক প্রতিবেশী পল্টু কুমার জানা বলেন 'আমি তার দুই দাদার ইমারতি রিক্সায় নিয়ে আসি। দেখা হলে বলে দুই দাদার আবাস যোজনা হলো। প্রথমে নাম আসলেও  আমি বকা বলে আসাব যোজনায় বাড়ি দেয়নি। সেই অবসাদ থেকে হয়তো আত্মহত্যা করেছে'।     

    

Comments

Popular posts from this blog

আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়া নিয়ে বকুনিতে অভিমানে আত্মহত্যা কিশোরের।

এগরার যুবকের সঙ্গে সাতপাঁকে বাঁধা পড়লো বাংলাদেশী কন্যা।

বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা চলছিল। বন্ধুদের সঙ্গে মদ খেয়ে বাইক দুর্ঘটনায় সেই যুবকের মৃত্যু হল।