স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকা নিখোঁজে তালা বন্ধ হলো আস্ত একটা স্কুল


ভগবানপুর- স্কুলের এক মাত্র প্রধান শিক্ষিকা হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। স্কুলে মিড-ডে মিল খেয়ে ছাত্র ছাত্রীরা কেবল বাড়ি ফিরে যেতো। পাশের স্কুলের এক শিক্ষিকাকে স্কুলে সাময়িক নিয়োগ করা হলেও নিখোঁজ শিক্ষিকার নাগাল পায়নি প্রশাসন। তড়িঘড়ি বাকি ছাত্র ছাত্রীদের অন্য স্কুলগুলিতে পাঠিয়ে ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়া হল তিন দশকের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের। শিক্ষিকার অভাবে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষোভ গ্রামবাসীদের। 

ভগবানপুরের মুন্ডুভাঙা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রটি সাড়ে তিনদশকের আগে ১৯৯৮ সালে তৈরী হয়েছিল। মুন্ডুভাঙা গ্রামের জনৈক এক ব্যক্তির জমিতে এই স্কুলটি মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল। শুরুতে স্কুলে চারজন শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়েছিল। ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় দেড়শোর কাছাকাছি ছিল। প্রথম শ্রেনী থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত এই শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে পঠন পাঠন হতো। সর্বশিক্ষা মিশনে সেই স্কুলের পাকা ভবন তৈরী হয়েছে। এদিকে বয়সের কারনে একে একে তিনজন শিক্ষিকা অবসর গ্রহণ করেছেন। গুড়গ্রাম বাজারের বাসিন্দা স্মৃতি প্রামাণিক একমাত্র শিক্ষিকা হিসেবে স্কুলে কর্মরত ছিলেন। তিনি আবার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। বর্তমানে এই স্কুলে সতেরোজন ছাত্র ছাত্রী ছিল। গত ৩ জানুয়ারি থেকে হঠাৎ ওই প্রধান শিক্ষিকা স্কুলে আশা বন্ধ করে দেন। শিক্ষিকা না থাকায় প্রথমদিকে স্কুল খুলতেন মিডডে মিলের রাঁধুনিরা। সেই সময়কালে স্কুলে কোন পড়াশুনা হতোনা শুধুমাত্র মিডডে মিলের খাবার খেয়ে পড়ুয়ারা বাড়ি ফিরে যেতো। ব্লক প্রশাসন ও অভিভাবকেরা ফোনে যোগাযোগ করলে শিক্ষিকা নিজে অসুস্থ থাকার অজুহাত দেখাতেন। একটা সময়ে শিক্ষিকার ফোনেও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সতেরো জন ছাত্র ছাত্রীদের ভবিষ্যত নিয়ে বিড়ম্বনা পড়েন অভিভাবকেরা। ব্লক প্রশাসনের তরফে স্থানীয় একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্র থেকে তিন সপ্তাহের জন্য মুন্ডুভাঙা স্কুলে পাঠানো হয়। যে স্কুলে থেকে সাময়িক ভাবে শিক্ষিকাকে তুলে আনা হয়েছিল সেখানে মাত্র দুজন শিক্ষিকা ছিলেন। দুজন শিক্ষিকায় ছাত্র ছাত্রীর সংখ্যা ছিল চল্লিশ জন। সাময়িক দায়িত্ব নিয়ে আসা নতুন শিক্ষিকা মুন্ডুভাঙা শিশুশিক্ষা স্কুলে তিন সপ্তাহ ছিলেন। পরবর্তীতে বেপাত্তা হয়ে যাওয়া শিক্ষিকার সন্ধান না পেয়ে ওই স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ব্লক প্রশাসন। স্কুলের সতেরোজন ছাত্র ছাত্রীকে পাশের পূর্ব কালুপুর, পশ্চিম কালুপুর , গুড়গ্রাম প্রাথমিক স্কুল ও গড়ভেড়া স্কুলে স্থানান্তরিত করা হয়। চতুর্থ শ্রেণীর চারজন ছাত্র ছাত্রী পরীক্ষার পরে গুড়গ্রাম হাইস্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে। গ্রামের একমাত্র শিশুশিক্ষা কেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এলাকার ছাত্র ছাত্রীদের প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে স্কুল গুলিতে যাতায়াতে সমস্যায় পড়েছে পড়ুয়ারা। পাশ্ববর্তী স্কুল গুলিতে শিক্ষকের সংখ্যা বেশি থাকায় অতিরিক্ত পড়ুয়া ভর্তি হলেও সমস্যা কিছু হয়নি। শিক্ষিকা নিয়োগ বন্ধ থাকায় নতুন করে শিক্ষকা পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামের একমাত্র স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ অভিভবকেরা। অবিলম্বে স্কুল চালুর দাবি জানালো গ্রামবাসীরা। খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ব্লক প্রশাসন। 

এক গ্রামবাসী বুদ্ধদেব সামন্ত বলেন ' একমাত্র শিক্ষিকা বেপাত্তা হয়ে যাওয়ায় স্কুল বন্ধ করে দিয়েছেন প্রশাসন। এই স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের দূরে স্কুলে যেতে হচ্ছে। নতুন করে যাতে এই স্কুল খোলার দাবী জানিয়েছি প্রশাসনকে'। 

ভগবানপুর-১ বিডিও বিকাশ নস্কর বলেন ' স্কুলের একমাত্র শিক্ষিকার হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। সাময়িক এক শিক্ষিকা অন্য স্কুল থেকে পাঠানো হয়েছিল। তাতে দুটি স্কুলে অচলাবস্থা তৈরী হচ্ছিল। বাধ্য হয়ে এই স্কুলটি বন্ধ করে ছাত্র ছাত্রীদের পাশের স্কুলে পাঠানো হয়েছে। স্কুল চালুর চেষ্টা করা হচ্ছে'।                                 

Comments

Popular posts from this blog

আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়া নিয়ে বকুনিতে অভিমানে আত্মহত্যা কিশোরের।

এগরার যুবকের সঙ্গে সাতপাঁকে বাঁধা পড়লো বাংলাদেশী কন্যা।

বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা চলছিল। বন্ধুদের সঙ্গে মদ খেয়ে বাইক দুর্ঘটনায় সেই যুবকের মৃত্যু হল।