পুলিশের উপর হামলায় ধৃত তিন গ্রামবাসী


এগরা- পুলিশ কর্মীদের উপর হামলার ঘটনায় তিরিশ জনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু হলো। হামলাকারীদের খোঁজে সোমবার দুপুরে বিশাল পুলিশ বাহিনীও র্যাফ গ্রামে তল্লাশি অভিযান চালায়। পুলিশি ধড়পাকড়ে আশঙ্কায় রবিবার রাত থেকে পুরুষ শূন্য গোটা গ্রাম। পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় অভিযুক্তদের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। 

এগরার রাজেন্দ্রচকে রাজনৈতিক পেশী শক্তির আস্ফালন যেন পুরনো রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ক্ষমতায় যে আসে এই রাজন্দ্রেচকে তার নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই বুথে তৃণমূলের পঞ্চায়েতের আমলে বিরোধীদের উপর অত্যাচার ঘরবাড়ি ভাঙচুর সহ চাষবাস বন্ধ করে দেওয়ার ফতোয়া জারি হয়েছিল। সেই সময়ে বিরোধী বিজেপি ও বামেদের ঘরছাড়া হয়ে হয়েছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজেন্দ্রচকে বিজেপি জয়ী হয়েছে। এই গ্রামে কয়েক হেক্টর সরকারি খাস জমি রয়েছে। গ্রামের মাতব্বরেরা রাজনৈতিক ভাবে বিঘার পর বিঘা সরকারি জমি তাদের লোকজনদের চাষবাস করতে দিয়ে থাকে। সেই জমির স্বত্ব দিয়ে গ্রামের বাৎসরিক পুজো ও অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রামের পুজো পুজো ও কমিটি গঠন নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে ঝামেলা তৈরী হয়। বিজেপির পক্ষে লোকবল বেশি থাকায় কমিটিতে তৃণমূলের লোকেরা সুযোগ পায়নি। বিজেপি ঘেঁষা কমিটি গ্রামে শীতলা পুজোর আয়োজন করে। সেই পুজো করতে বাধা দেয় তৃণমূল কর্মী শচীন বর সহ তার অনুগামীরা। সেই বাধা উপেক্ষা করে পুজোর আয়োজন শুরু হয় গ্রামের মন্দির। পুজোর আগের রাতে কমিটির সদস্য তাপস প্রামানিকের বাড়ি ভেঙে তার স্ত্রীর মাথায় ভোজালি দিয়ে কোপানোর অভিযোগ উঠে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে। রাতে প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে এলে দুষ্কৃতীরা বোমাবাজি করতে করতে পালিয়ে যায়। সেই ঘটনায় তাপস প্রামাণিকের পরিবার তৃণমূল কর্মী শচীন বর সহ তার সাকদের বিরুদ্ধে এগরা থানায় অভিযোগ করে। সেই ঘটনায় পুলিশ এখনো পর্যন্ত অভিযুক্ত তৃণমূল কর্মীদের গ্রেফতার করেনি। পুলিশের অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করার পিছনে তৃণমূলের ষড়যন্ত্র দেখে। উল্টে গ্রামবাসীদের হামলা ও হুশিয়ারিতে অভিযুক্তরা ঘরছাড়া হয়। শচীনের জমির ধান কাটতে বাধা দেয় একাংশ গ্রামবাসী। রবিবার দুপুরে সেই ঘটনার তদন্ত সহ শচীনকে ধান কাটতে নিরাপত্তা দিতে গ্রামে পৌঁছে ছিল পুলিশ। হামলাকারীদের পুলিশ গ্রেফতার না করে নিরাপত্তা দিতে আসায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে গ্রামবাসী সহ বিজেপি কর্মীরা। মহিলাদের সঙ্গে বচসা চলাকালীন পিছন থেকে পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়। এই ঘটনায় রবিবার রাতে হামলাকারী তিরিশ জনের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। পুলিশি ধড়পাকড়ের ভয়ে রবিবার রাত থেকে পুরুষ শূন্য হয়ে যায় রাজেন্দ্রচক। সোমবার দুপুরে এগরা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী ও র্যাফ গ্রামে গিয়ে তল্লাশি ও ধড়পাকড় শুরু করে। মহিলারা গ্রামে পুলিশকে ঢুকতে বাধা দিলে তাদের উপর পুলিশ লাঠিচার্জ করে। ঘটনায় কয়েকজনকে পুলিশ আটক করেছে। পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। 

মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা বিজেপি সম্পাদক তন্ময় হাজার বলেন ' ফেব্রুয়ারী মাসে বিজেপি সমর্থক এক মহিলাকে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা ভোজালি দিয়ে কুপিয়েছিল। পুলিশ তৃণমূলের কথায় তাদের এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করেনি। সেই আক্রোশ থেকে গ্রামবাসীর পুলিশের উপর আক্রমণ করেছে'। 

এগরার তৃণমূল বিধায়ক তরুন কুমার মাইতি বলেন 'সেই গ্রামের এক বিজেপি নেতা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরী করেছে। আমাদের কর্মী সমর্থকদের ঘরছাড়া করেছে। পুলিশের উপর এই বিজেপির লোকজন হামলা চালিয়েছে। সেই দুষ্কৃতীদের না গ্রেফতার করায় ফল পুলিশকে এখন ভুগতে হচ্ছে '।     

             

Comments

Popular posts from this blog

আত্মীয়ের বাড়িতে যাওয়া নিয়ে বকুনিতে অভিমানে আত্মহত্যা কিশোরের।

এগরার যুবকের সঙ্গে সাতপাঁকে বাঁধা পড়লো বাংলাদেশী কন্যা।

বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজা চলছিল। বন্ধুদের সঙ্গে মদ খেয়ে বাইক দুর্ঘটনায় সেই যুবকের মৃত্যু হল।