পা ভেঙে যাওয়ার হাঁটা চলায় অক্ষয় নিশিকান্তকে জঙ্গলে ঝুপড়ি ঘরে রেখে এলো পরিবার
- Get link
- X
- Other Apps
পটাশপুর- জঙ্গলের মধ্যে বাঁশের বেড়া দেওয়া ত্রিপলের একটি ঝুপড়ি। রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঝুপড়ির মধ্যে শেয়ার কুকুরের সঙ্গে প্রায় সহাবস্থান করেন বছর পঞ্চান্নের পঙ্গু নিশিকান্ত। এটি কোন সিনেমায় দৃশ্য নয়। বাস্তবে এই ছবি পটাশপুরের প্রত্যন্ত নরিয়া গ্রামের। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যেই রাজ্যে মানুষকে সরকারি প্রকল্পের হাতছানি দেয়। সেই রাজ্য অসহায় পঙ্গু নিশিকান্তদের বেঁচে থাকার জন্য সরকারি কোন প্রকল্পের দিশা নেই। অসহায় এই সকল মানুষ অবহেলায় তিলে তিলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। প্রশাসনের কাছে অসহায় নিশিকান্তকে সাহায্যের দাবী জানালেন গ্রামবাসীরা।
নরিয়া গ্রামে প্রায় আট বছর বয়সে নিশিকান্ত করের মাতৃ বিয়োগ হয়েছিলেন। বাবা এক ছেলে ও দুই মেয়েকে মানুষ করতে দ্বিতীয় বার বিয়ে করেন। পরবর্তীতে নিশিকান্তের বাবার মৃত্যু হয়। স্বামী হারা বৃদ্ধা কমলা করের তিনকাল গিয়ে এককালে এসে ঠেকেছে। হাবাগোবা নিশিকান্তের বয়স এখন পঞ্চান্নের দোরগোড়ায়। গ্রামে যে যখন ডাকেন তার বাড়ির কাজ করেন। বিনিময়ে তার বাড়িতে পেটভরে খেয়ে আসেন। এভাবেই তার দিককাল চলছিল। মাস ছয়েক আগে পাশের রাউতা গ্রামের এক ব্যক্তির বাড়িতে কাজ করতে গিয়েছিল। সেখানে দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে বাড়ি ফিরছিলেন। রাস্তার পাশে একটি গাছ তলায় ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। আচমকাই গাছের প্রকান্ড শুকনো মরা ডাল ভেঙে নিশিকান্তের ডান পায়ের উপর পড়ে। তাতেই পা ভেঙে যায়। বৃদ্ধা বছর সত্তোরের ছোট মা একা বাড়িতে কোনমতে সংসার চালান। বড় ছেলের পা ভেঙে যাওয়ায় গ্রামবাসীদের সহযোগিতা নিয়ে নিজের জমানো অর্থ দিয়ে পায়ের শল্যচিকিতা করিয়ে আনে। তাতেও ভাঙা পা সারেনি। সেই থেকে হাঁটা চলা বন্ধ হয়ে যায় নিশিকান্তের। বাড়িতে বিছানা শয্যা হয়ে পড়েছিল। বিছানায় মলমূত্র করায় বাড়ি ঘর দুর্গন্ধ ছড়াতো। এতবড় ছেলের শ্রূষার করার মতো দৈহিক সামর্থ্য নেই ছোট মায়ের। দুগন্ধে বাড়িতে খাওয়া দাওয়া লাটে উঠেছিল। এমতাবস্থায় প্রতিবেশীদের মরামর্শে বাড়ি থেকে প্রায় দুশোমিটার দূরে বাঁশের জঙ্গলে ত্রিপল ও বাশের বেড়ার ঝুপড়িতে রেখে আসা হয় নিশিকান্তকে। পাড়া প্রতিবেশি থেকে বৃদ্ধা মা দুবেলা সময় করে সেই বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে। রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকার জঙ্গলে শেয়াল কুকুরের সঙ্গে বসবাস করতে হবে অসহায় নিশিকান্তকে। রাজ্যে শিশুর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প সুযোগ সুবিধা পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। নিশিকান্তদের মতো অসহায় পঙ্গুদের জন্য কোন সরকারি প্রকল্পের ব্যবস্থা নেই বলে দাবী প্রশাসনের। জঙ্গলের মধ্যে ঝুপড়ি বাড়িতে অবহেলা ও অনাহারে মৃত্যু প্রহর গুনছে এই সকল হাজারো নিশিকান্তরা। প্রশাসনের দাবী ষাট বছর হলে তাকে সরকারি বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করা সম্ভব হতো। যেহেতু মাঝ বয়সী তাই নির্দিষ্ট কোন সরকারি প্রকল্পে সাহায্য করার বিধান নেই। অসহায় নিশিকান্তকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য প্রশাসনের কাছে মানবিক সাহায্যের দাবী জানাচ্ছেন নরিয়া গ্রামের সাধারণ মানুষ। ব্লক ও মহকুমা প্রশাসন দ্রুত এই বিষয়ে হস্তক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। জঙ্গলে ঝুপড়ি থেকে নিশিকান্তকে উদ্ধার করে খাবার ও শুশ্রূষার করা হবে বলে ব্লক প্রশাসন এদিন জানিয়েছেন।
পটাশপুর-১ বিডিও বিধানচন্দ্র বিশ্বাস বলেন ' এই সকল মানুষের সাহায্যের জন্য সরকারি কোন প্রকল্প নেই। মানবিক ভাবে ওই ব্যক্তিকে সাহায্য করা হবে। পর্যাপ্ত খাবার ও শুশ্রূষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে'।
ছোট মা বৃদ্ধা কমলা কর বলেন ' একা বুড়ো মানুষ রান্না করে ছেলেকে এই অবস্থায় ঘরে রেখে খাওয়া জুগিয়েছি। বিছানায় নোরং করায় দুর্গন্ধে রান্না খাওয়া পরিস্থিতি ছিলনা। প্রতিবেশিরা ও বকাঝকা করছিল। পরিজনদের পরামর্শ ছেলেকে একটু দূরে ঝুপড়ি ঘরে করে বাধ্যহয়ে রেখে আসতে হয়েছে। সেখানে ছেলেকে নিয়মিত খাবার দিয়ে আসি'।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment