বিলীনের পথে ঐতিহাসিক ও স্বাধীনতা স্মৃতি প্রতাপদিঘি
- Get link
- X
- Other Apps
খালপাড়ের পাঁচ একর জায়গা জুড়ে রাজা প্রতাপ চন্দ্র ভানের আমলে সুদৃশ্য দিঘি তৈরী হয়েছিল। দিঘির পাড়ে অবিভক্ত মেদিনীপুরে লবন সত্যগ্রহ আন্দোলনে ব্রটিশদের গুলিতে বাংলার প্রথম শহীদ হয়েছিল। ঐতিহাসিক এই দিঘীর পাড়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে শহীদ স্মৃতি। জমি হাঙ্গরদের দখলে যাচ্ছে ঐতিহাসিক প্রতাপদিঘী। তিনদশকের বেশি সময় ধরে বেআইনিভাবে দিঘি ভরিয়ে মাথাতুলে দাঁড়িয়ে সমিল ও রাইসমিল, স্কুল সহ বেআইনি বাড়ি।
রাজা প্রতাপ চন্দ্র ভানের আমলে পাঁচ একর জমিতে সুদৃশ্য দিঘি তৈরী হয়। কথিত রয়েছে সেই রাজার নামানুসারে প্রতাপদিঘী হয়েছে। প্রতাপদিঘীর খাল পাড়ে ১৯৩০ সালে ১ জুন লবন সত্যাগ্রহ আন্দোলনে ব্রিটিশদের গুলিতে ঘটনাস্থলে দু'জন শহীদ হয়েছিলেন। লবন সত্যাগ্রহ আন্দোলনে বাংলার প্রথম শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে প্রতাপদিঘী পাড়ে রয়েছে শহীদ স্মৃতি সৌধ। সেই সৌধ আজ আবঅবহেলিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বর্তমানে দিঘিটি ব্যক্তি মালিকানাধীন থাকায় অনেকেই দিঘির অংশ বিক্রি করছেন। দিঘির অংশ কিনছেন দিঘির পাড়ের সেচ দফতরের জমিতে বেআইনিভাবে দখল করে থাকা বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা। পরবর্তীতে তারাই দিঘি মধ্যে বেআইনিভাবে মাটি ও ছাই ফেলে ধীরে ধীরে ভরাট করে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তার করছেন। কয়েক দশক ধরে শাসক দলগুলির ছত্র ছায়ায় এই ধরনের ঐতিহাসিক দিঘী ভরাটের অভিযোগ উঠেচে। দিঘিতে মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে বেআইনি ঘরবাড়ি থেকে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গুলো। পটাশপুর-২ ব্লক প্রশাসনিক দফতর সহ শ্রীরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে অফিস এই দিঘির পাড়ে রয়েছে। প্রশাসনের চোখের সামনে বেআইনিভাবে দিঘি ভরিয়ে দোকান বাড়ি ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের জমি তৈরীর অবাধে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ একর দিঘির চারপাশ বেআইনিভাবে ভরাট করায় প্রায় অর্ধেকে এসে ঠেকেছে। সুবিশাল দিঘি এলাকায় জীববৈচিত্র ও বাস্ততন্ত্র রক্ষা করে। ধীরে ধীরে দিঘি ভরাট দখল হয়ে যাওয়ায় বিপন্ন হচ্ছে এলাকায় জীববৈচিত্র। ১৯৯০ সালে প্রতাপদিঘীকে বাঁচানোর চেষ্টায় "প্রতাপদিঘী নাগরিক মঞ্চ'' তৈরী করে গন আন্দোলনে তৈরী হয়েছিল। জেলা প্রশাসন থেকে রয়টার্স ভবনে এই বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন নাগরিক মঞ্চ। সেই সময়ে অবিভক্ত মেদিনীপুরে জেলা শাসক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দিঘি সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দাবী। দিঘি পাড়ের বেআইনিভাবে জমি দখল করে তৈরী হওয়া প্রতিষ্ঠান গুলি দিঘির ভরাট করা অংশ তুলে নেওয়ার জন্য মুচলেকা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সেই কাজ কার্যকরী হয়নি। উল্টে কয়েক দশক ধরে দিঘি ভরাট করে নির্বাচারে দখল করার অভিযোগ উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে স্থানীয়রা এই বিষয়ে ব্লক প্রশাসনের কাছে একাধিকবার দরবার করেছেন। বেআইনিভাবে দিঘি ভরাটের পিছনে শাসকদলের যোগসাজশ থাকার অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। অভিযুক্তরা শাসকদলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় চোখের সামনে ঐতিহাসিক দিঘী ভরাট হলেও চুপ প্রশাসন। দিঘি বাঁচানোর দাবী জানিয়ে প্রতাপদিঘী নাগরিক মঞ্চ। বেআইনিভাবে দিঘি ভরাটে কাজে অভিযুক্তরা এই বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ঐতিহাসিক প্রতাপদিঘীকে রক্ষা করার দাবী জানিয়েছে এলাকায় সাধারণ মানুষ।
প্রতাপদিঘী নাগরিক মঞ্চের সভাপতি ভর্গবেন্দ্র জানা বলেন ' নব্বইয়ের দশক থেকে ঐতিহাসিক এই দিঘি ভরাট করে ঘরবাড়ি ও একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। নাগরিক মঞ্চের আন্দোলনের ফলে প্রশাসন কিছুটা তৎপরতা দেখিয়ে ছিলেন। পরবর্তীতে সেই দিঘি অবাধে ভরাট করা হচ্ছে। বিলিনের পথে পটাশপুরে ঐতিহাসিক প্রতাপদিঘী'।
পটাশপুর-২ বিডিও শঙ্খ ঘটক বলেন ' নাগরিকদের তরফে একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। ভূমি রাজস্ব দফতর সহ ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠক ডাকা হবে। ঐতিহাসিক প্রতাপদিঘীকে কোন ভাবে দখল করা যাবেনা। বেআইনি কাজ হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে'।
- Get link
- X
- Other Apps
Comments
Post a Comment