বন্যা টিয়া ও চন্দনা পুষেছেন কি ফেঁসেছেন
এগরা- নিছক শখের বসে বাড়িতে টিয়া ও চন্দনা পাখি পুষলেও আইনি জটিলতায় পড়বেন। বনদফতরের উদ্যোগে পুজোর আগে জেলা জুড়ে খাঁচা বন্দি টিয়া ও চন্দনা মুক্ত করতে চালানো হবে নিবিড় সচেতনতা প্রচার। সচেতনা প্রচারে কাজ না হলে বাড়ি বাড়ি খাঁচা বন্দি টিকা ও চন্দনা পাখি উদ্ধার অভিযান চালাবে বনদফতের কর্মীরা।
ভারতে বন্যাপ্রানী সংরক্ষণ আইন ২০১২ অনুযায়ী বেশ কয়েকটি একধিক প্রজাতির পাখি ও প্রানী বেচা কেনা সহ বাড়িতে পোষা বেআইনি। সুরক্ষিত প্রজাতির তালিকায় দেশীয় বন্য টিয়া ও চন্দনা যেমন ইন্ডিয়ান রিংনেট প্যারট বা সবুজ টিয়া। আলেকজান্দ্রিন প্যারাকিট ও হিল মাইনার মতো দেশীয় পাখি কেনা ও বাড়িতে রাখা বেআইনি কাজ। জেলায় বিভিন্ন মেলা গুলিতে সংরক্ষণ প্রজাতির টিয়া ও চন্দনা সহ ময়না পাখি বিক্রির নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আগাম সচেতনতা প্রচার চালায় বনদফতর। গুরুত্বপূর্ণ বাজার ও বাসস্টপ গুলিতে বন্যাপ্রানী সংরক্ষণ আইনে সংরক্ষিত প্রজাতির পাখি ও প্রানী বেচাকেনা বন্ধে জেল ও জরিমানা নিদান দিয়ে হোডিং দেওয়া হয়। এতকিছু পরেও জেলায় জুড়ে মেলায় অভিযান চালিয়ে প্রচুর বেআইনি টিয়া ও ময়না উদ্ধার করে বনদফতর। চোরা পথে এই সংরক্ষিত প্রজাতির টিয়া ও চন্দনা গৃহস্থের বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে। নিছক শখের বসে আইন না মেনে বন্য টিয়া ও চন্দনা পাখি পোষার প্রবনতা আজকাল খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। পোষার ছলে কেউ টিয়া ও চন্দনার ডানার পালক কেটে আকাশে ওড়ার দক্ষতাকে খর্ব করে দিচ্ছে। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী জেলায় প্রতি একশোটি বাড়ির মধ্যে গড়ে চার থেকে পাচটি বাড়িতে সংরক্ষিত প্রজাতির বন্য টিয়া ও চন্দনা বেআইনিভাবে রয়েছে। সেই হিসেবে জেলায় কয়েক হাজার এই ধরনের সংরক্ষিত প্রজাতির টিয়া ও চন্দনা সহ ময়না খাঁচা বন্দি রয়েছে। উত্তরবঙ্গে বনাঞ্চল বেশি থাকায় সেই এলাকায় এই ধরনের টিয়া ও চন্দনা পাখি উপস্থিত অনেকটাই বেশি। সেই তুলনায় দক্ষিণবঙ্গে বনাঞ্চল অনেকটাই কম থাকায় আশ্রয় স্থলের সংকোচনের কারনে টিয়া ও চন্দনা সংখ্যা অনেকটাই কম। তবে চোরা পথে উত্তর বঙ্গ ও পড়শি রাজ্য ওড়িশা পাহাড়ি এলাকা থেকে প্রচুর বন্য টিয়া ও চন্দনা প্রতিবছর পূর্ব মেদিনীপুর আসে। আইন না জেনে চড়া দামে সেই টিয়া ও চন্দনা সাধারণ মানুষ পোষার শকে বাড়িতে রাখতে। আইন অনুযায়ী টিয়া ও চন্দনা বিক্রি সহ বাড়িতে রাখতে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক জরিমানা হতে পারে। প্রয়োজনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। পাখির প্রাকৃতিক জীবন যাপন এবং বংশবিস্তার মানেই তাদের সংরক্ষণ করা। পোষা হলে তাদের জীবন বিপজ্জনক হয়ে উঠে। দুর্গা পুজোর আগে জেলা জুড়ে পোষা টিয়া ও চন্দনা মুক্ত করতে নিবিড় সচেতনতা প্রচার চালাবে বনদফতর। প্রতিটি বিট অফিস কেন্দ্রিক এই প্রচারের পাশাপাশি জেলা এই কর্মসূচি চলবে। জ্ঞাত বা অজ্ঞাতে গৃহস্থের বাড়িতে পোষা টিয়া ও চন্দনা রাখা যে বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ এই বার্তা দেওয়া হবে। আইন মেনে পোষা টিয়া ও চন্দনা মুক্ত করার কথা বলা হবে। সচেতনা প্রচারে কাজ না হলে বাড়ি বাড়ি পোষা টিয়া ও চন্দনা উদ্ধার অভিযানে নামবে বনদফতরের কর্মীরা। বনদফতরের এই উদ্যোগ কতটা বাস্তবায়িত হয় সেই দেখার বিষয়।
জেলা মুখ্য বন আধিকারিক অর্নব সেনগুপ্ত বলেন 'সংরক্ষিত প্রজাতির বন্য টিয়া ও চন্দনা বিক্রি ও পোষা সম্পূর্ণ বেআইনি। এই পোষা টিয়াকে খোলা আকাশে মুক্ত করতে আগে সচেতনতা প্রচার চালানো হবে। আইনের গুরুত্ব বোঝানো হবে মানুষকে। কাজ না পরবর্তীতে এলাকা চিহ্নিত করে উদ্ধার অভিযান চালানো হবে'।
Comments
Post a Comment